Skip to main content

কোমর ব্যথা

কোমর ব্যথার কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা




কোমর ব্যথা খুব সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। জীবনে কোমর ব্যথা হয়নি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। দেখা গেছে, জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময় এ সমস্যায় পড়েছেন। বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা সাধারণত ৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। এ সময়টিতে একজন আধুনিক পুরুষ ও নারী তাঁর পেশাগত জীবনে অনেক সময় ধরে বসে থাকার সঙ্গে যুক্ত হন। এ কারণে কোমরের মাংসপেশিগুলো ধীরে ধীরে তার নমনীয়তা হারাতে থাকে বলে জানিয়েছেন ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল। কোমর ব্যথা আরো ঘটে সে সব লোকের, যাঁরা পারিবারিক দায়িত্ব পালনের বোঝা কাঁধে তুলে নেন। ফলে ভোগেন মানসিক চাপে।


আবেগজনিত চাপ মাংসপেশির টান ও ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। শরীরের অন্যান্য মাংসপেশির চেয়ে কোমরের পেশিগুলো সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত, তাই এগুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কারণ হলো এসব মাংসপেশি শরীরের অন্যান্য স্থানের মাংসপেশির তুলনায় খুব ঘনঘন ঢিলে ও সংকুচিত হয়। কোমর ব্যথা বলতে সচরাচর ‘লো ব্যাক পেইন’ বোঝায়।

কোমর ব্যথার কারণ:

কোমর ব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হলো মাংসপেশি কিংবা টেনডনে মচকানি। হঠাৎ ভারী জিনিস তুললে এটা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোমর ব্যথার প্রধান কারণ শুধু ভুলভাবে অবস্থান করা অর্থাৎ আপনি যদি বসা, হাঁটা কিংবা দাঁড়ানোর সময় সঠিকভাবে অবস্থান না করেন তাহলে কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এটি কোমর ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

দৈনিক রিকশায় ঘোরা, বাসে বা লোকাল ট্রেনে চড়া কিংবা হঠাৎ ঘুরে যাওয়া কিংবা বাঁকা হওয়া আপনার কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি হাঁচি, কাশি বা ভুল অবস্থানে ঘুমানোর জন্য আপনার কোমরের পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে মারাত্মক ব্যথা ঘটাতে পারে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে উঁচু হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পরা, অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা রোগ এবং গর্ভাবস্থা। গর্ভবতী নারীদের মতো যেসব পুরুষ পেট সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে লাটসাহেবের মতো হাঁটেন, তাঁরাও কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হন। পেছনের দিকে এভাবে অতিরিক্ত বাঁকানোয় মেরুদণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

কোমর ব্যথার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো পিএলআইডি বা প্রোল্যাপ্সড লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক। এ ক্ষেত্রে কোমরের মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝখানে ডিস্ক নামে যে তরুণাস্থি থাকে, সেটি পেছনে বা পাশের দিকে বেরিয়ে এসে স্পাইনাল কর্ড বা মেরুমজ্জায় বা এর থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভের গোড়ায় চাপ দিয়ে ব্যথা ও স্নায়বিক দুর্বলতা ঘটায়।

পেশাগত কারণে যাদের কোমর বাঁকা করে কাজ করতে হয় তাদের কোমর ব্যথা হয়, যেমন : ঝাড়ুদার, আবর্জনা সংগ্রহকারী, কুলি ইত্যাদি। যাঁরা কম্পমান মেশিনে দীর্ঘদিন কাজ করেন, তাঁদেরও কোমর ব্যথা বেশি হতে পারে।

মেদবহুল লোকদের কোমর ব্যথা বেশি হয়। অতিরিক্ত ওজন কোমরে চাপ সৃষ্টি করে। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা হয় মাংসপেশির টান টান অবস্থার কারণে। এ ক্ষেত্রে কাজকর্ম, খেলাধুলা, আঘাত ইত্যাদি কারণে মাংসপেশিতে টান পড়ে।


কোমর ব্যথার আরো উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয়, মেরুদণ্ডের বাত, অস্টিওপরোসিস, অস্টিওম্যালাসিয়া, ইনফেকশন। যেমন : অস্টিওমাইলাইটিস, টিউবার কোলোসিস, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি। জন্মগত কারণ, যেমন : স্কলিওসিস, স্পনডাইলোলিসথেসিস, স্পাইনা বাইফিডা, স্পনডাইলোলাইসিস ইত্যাদি। টিউমার, ক্যানসার, ক্ষয়জনিত সমস্যা, যেমন : অস্টিওআর্থ্রাইটিস, লাম্বার স্পনডাইলোসিস ইত্যাদি। এ ছাড়া মেরুদণ্ড ছাড়া অন্যান্য কারণ, যেমন : বিভিন্ন ধরনের স্ত্রীরোগ, জননাঙ্গ ও মূত্রতন্ত্র সংক্রান্ত রোগ এবং পাক-আন্ত্রিক অবস্থা ইত্যাদি


চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখলে ব্যথা চলে যায় এবং পরে ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। ব্যথা থাকা অবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ দেওয়া যেতে পারে




Comments

Popular posts from this blog

অর্শ( Haemorrhoid)

           Haemorrhoid বা অর্শ  অর্শ বা পাইলস হলো পায়ূ পথের রক্তনালী ফুলে যাওয়া রোগ। মেডিকেল ভাষায় একে হেমোরয়েড বলা হয়। অর্শের লক্ষণগুলি হলো: মলত্যাগের সময় ব্যথা ছাড়াই রক্তপাত, মলদ্বার এলাকায় চুলকানি, পায়ূ এলাকায় ব্যথা বা অস্বস্তি, মলদ্বারের কাছে সংবেদনশীল বা বেদনাদায়ক পিণ্ডের উপস্থিতি, মলদ্বারের চারপাশে ফুলে যাওয়া.   অর্শ  অর্শের কারণগুলি হলো: মলত্যাগের সময় চাপ,দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকাগ,র্ভাবস্থা,স্থূলতা,কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ভাবে  অর্শ দিতে পারে; তবে অনেকের মধ্যে এই দু’টির সমন্বয় দেখা যায়।  জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে এতটা রক্তপাত আরও বিরল। সমস্যা দেখা দিলে অনেক লোকই বিব্রত বোধ করে এবং কেবল রোগের যথেষ্ট বিস্তারের পরই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। অভ্যন্তরীণ অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডস হলে সচরাচর অন্ত্রের আন্দোলনের আগে বা পরে বেদনাহীন, উজ্জ্বল লাল রেকটাল ব্লিডিং (মলদ্বারে রক্তপাত) হতে পারে।মল রক্ত দ্বারা আবৃত থাকতে পারে, যে অবস্থাকে হেমাটোকেজিয়া বলে।  অভ্যন্তরে হলে এমন এক্ষেত্রে টয়লেট...

Hijama

                হিজামা হিজামা বা হজ্জাম অথবা কাপিং নামে পরিচিত এই ভারতের জাতিগোষ্ঠী কাপিং থেরাপি অনুশীলনের জন্য পরিচিত। হিজামা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ আল হাজম থেকে। আরব দেশগুলিতে একজন কাপিং থেরাপি অনুশীলনকারীকে হিজামা বলা হত এবং ভারতেও এই নামটি ব্যবহৃত হত। মুহাম্মদের কিছু সহকারী খিলাফত ক্ষমতার সময় পারস্য, মিশরে ইসলামের বাণী প্রচার করে।